একাকীত্ব - বার্ধক্যে আরও জটিল
একাকীত্ব বাড়ার কারণ বড়ই জটিল
বয়স বাড়ার সঙ্গে মানুষের একাকীত্ব বাড়ার কারণ অনেকগুণ জটিল ও গভীর। জীবনের গতিপথে সময়ের স্রোতে অভিজ্ঞতা, সম্পর্ক, প্রত্যাশা—সবকিছুই পরিবর্তিত হয়, আর সেই পরিবর্তনের মাঝে মানুষ প্রায়শই নিজেকে অজান্তেই বিচ্ছিন্ন বোধ করে।
প্রথমত, শৈশব-কৈশোরে যেখানে পরিবার, বন্ধু, ও সহপাঠীরা ঘিরে রাখে, সেই সময়ের সান্নিধ্য থাকে প্রায়শই আন্তরিক ও সরল। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্বের বোঝা, পারিবারিক ও সামাজিক চাপ বেড়ে যায়। কাজের ব্যস্ততা, পারিবারিক সম্পর্কের জটিলতা, আর জীবনের বাস্তবতার ভার একসময় মানুষের মনকে একাকী করে ফেলে।
দ্বিতীয়ত, মানুষ যখন জীবনের গভীরতর প্রশ্নগুলো উপলব্ধি করতে শুরু করে—নিজের অস্তিত্ব, মৃত্যু, সময়ের অমোঘ প্রবাহ—তখন তার মানসিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তিত হয়। অনেকসময় চারপাশের মানুষদের সাথে সেই গভীর চিন্তাভাবনা বা অনুভূতি ভাগাভাগি করা যায় না, ফলে দূরত্ব বেড়ে যায়।
তৃতীয়ত, সময়ের সঙ্গে প্রিয়জনদের হারানো, পুরনো সম্পর্কের বদলে নতুন সম্পর্ক তৈরি করতে অক্ষমতা, কিংবা সামাজিকীকরণের পরিবর্তন মানুষের একাকীত্বকে বাড়িয়ে তোলে। সমাজের দ্রুত পরিবর্তিত রূপে, আধুনিকতার ছোঁয়ায় মানুষের অনুভূতি অনেক সময় উপেক্ষিত বা অনুধাবিত থেকে যায়।
সর্বোপরি, বয়স বাড়ার সঙ্গে মানুষের মনের গভীরতায় এক ধরনের ‘স্ব-আবেগে নিমজ্জন’ ঘটে—যেখানে নিজের অনুভূতির প্রতি মানুষের দৃষ্টি বেশি হয়, আর বাহ্যিক সংযোগের প্রয়োজন কমে আসে। এই মিশ্র অনুভূতি, বাস্তবতার বোঝা আর আবেগের পরিপক্কতায়ই একাকীত্বের বীজ বপিত হয়।
সুতরাং, বয়স বাড়ার সঙ্গে একাকীত্ব আসে না শুধু সামাজিক বিচ্ছিন্নতার কারণে, বরং আত্ম-অনুসন্ধান ও বাস্তবতার গভীর উপলব্ধির সঙ্গে মানসিক দূরত্বের মিশ্রণে। এ এক মেঘলা দুপুরের নীরবতা, যা কখনও কখনও মনকে নিজেকে চিনতে সাহায্য করে, আবার কখনও বুক ভেঙে দেয়।
-- রণেন মুখার্জি